Thursday, June 28, 2012

ইলেক্ট্রনিক শপের সহজ পাঠ। পর্ব-৩: হাট্টি মাটিম টিম, মজার একটা নাম হচ্ছে ক্লাউড কম্পিউটিং





ক্লাউড কম্পিউটিং নামটি প্রথম যখন দেখেছিলাম, তখনই মাথায় এলো মেঘ আবার গুণে কিভাবে? মেঘ গণনা সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হলাম, অল্প বিস্তর যা জানলাম তাই নিয়ে এবারের পর্ব।



মেঘ হল জল বিন্দুর সমষ্টি, তেমনি অসংখ্য ইন্টারনেট ব্যবহারকারি এক হয়ে যে সার্ভিস ব্যবহার করে তাকেই বলা হয় ক্লাউড কম্পিউটিং। এই ব্যবস্থায় বিশাল বিশাল ফাইল বা পোগ্রাম নিজ কম্পিউটারে না রেখে ক্লাউড নেটওয়ার্কে সংরক্ষণ করে রাখা হয়। যেমন -

আপনার একটি প্রতিষ্ঠান থাকলে সেখানে কর্মরতরা কাজ সম্পন্ন করার জন্য সঠিক হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার পাচ্ছেন কিনা আপনাকেই তা নিশ্চিত করতে হবে। প্রত্যেককে কম্পিউটার দেয়ার পর কাজে ব্যবহৃত সফটওয়্যারগুলো লাইসেন্সসহ কিনতে হতে পারে। যদি আপনার ক্রয়কৃত সফটওয়্যারটি একাধিক কম্পিউটারে ব্যবহার করার সুযোগ না থাকে, তবে প্রত্যেক নতুন ও পুরাতন কর্মকর্তার জন্য লাইসেন্সসহ সফটওয়্যার কিনতে হবে। এক্ষেত্রে নতুন কর্মী ও কম্পিউটার সংযোজন মানেই নতুন লাইসেন্সসহ সফটওয়্যার কেনার বাড়তি খরচ। এ সমস্যার সমাধান হচ্ছে ক্লাউড কম্পিউটিং, যেখানে প্রত্যেক কম্পিউটারে শুধুমাত্র একটি এপ্লিকেশন লোড করতে হবে। এই এপ্লিকেশনটি ঐ প্রতিষ্ঠানের প্রত্যেক কম্পিউটার বা অন্য ডিভাইস ব্যবহারকারিকে একটি ওয়েব বেইজড সার্ভিসে লগইন করবে যেখানে কর্ম সম্পাদনের জন্য সমস্ত পোগ্রাম থাকবে। এই এপ্লিকেশন লোড করে ইমেইল-ওয়ার্ড প্রসেসিং-জটিল উপাত্ত বিশ্লেষণ সবই করা যায়। এই বিষয়টিকেই ক্লাউড কম্পিউটিং বলা হয়।





ক্লাউড কম্পিউটিং এর ফলে ইউজার সাইডে হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার এর চাহিদা কমে গেছে। ইউজার সাইডের ওয়ার্ক লোড চলে গেছে ক্লাউডের দিকে। কম্পিউটার ব্যবহারকারীর শুধু একটি জীনিস দরকার - ক্লাউড কম্পিউটিং সিস্টেমের ইন্টারফেস সফটওয়্যার, যা ওয়েব ব্রাউজারের মতোই সহজ একটি এপ্লিকেশন। বাকি কাজগুলো ক্লাউড নেটওয়ার্ক সম্পাদন করে।









ইতোমধ্যে ক্লাউড কম্পিউটিং এর কিছু সার্ভিস আমরা সবাই ব্যবহার করেছি। ওয়েব বেইজড ইমেইল সার্ভিস যেমন - ইয়াহু, হট মেইল বা জি মেইল ব্যবহারের ফলে আমরা ক্লাউড কম্পিউটিং সার্ভিস এর সাথে পরিচিত হয়েছি। একটি ইমেইল পোগ্রাম নিজের কম্পিউটারে রান করার পরিবর্তে একটি ওয়েব বেইজড ইমেইল একাউন্টে লগইন করে তথ্য চালাচালি করি এবং ৭-৮ গিগা বাইট বা আরো বেশী স্টোরেজ সুবিধা পাই। সে সফটওয়্যার ও স্টোরেজ কিন্তু আমাদের কম্পিউটারে থাকে না, তার জন্য রয়েছে সার্ভিস কম্পিউটার ক্লাউড।



ডাটা প্রসেসিং থেকে ভিডিও গেমস, যা কিছুই কল্পনা করুন না কেন - সবকিছুই ক্লাউড কম্পিউটার সিস্টেমে রয়েছে। আসলে প্রত্যেক এপ্লিকেশনের জন্যেই ক্লাউড কম্পিউটিং সিস্টেমে ডেডিকেটেড সার্ভার রয়েছে এবং সার্ভার এডমিনিস্ট্রেটর ট্রাফিক ও গ্রাহকের চাহিদা নিশ্চিত করেন।



ক্লাউড কম্পিউটিং সার্ভিস হিসেবে মূলত প্লাটফর্ম-PaaS, ইনফ্রাস্ট্রাকচার-IaaS ও সফটওয়্যার-SaaS ক্লাউড প্রদান করে থাকে।






ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব স্ট্যান্ডার্ডস এন্ড টেকনোলজি অনুসারে ক্লাউডকে চারটি ভিন্ন শ্রেণীতে ভাগ করা হয়েছে -

১। পাব্লিক ক্লাউড: যে কেউ ব্যবহার করতে পারেন।

২। প্রাইভেট ক্লাউড: শুধুমাত্র একটি অর্গানাইজেশন বা কোম্পানি ব্যবহার করতে পারে।

৩। কমিউনিটি ক্লাউড: একটি বিভক্ত গ্রুপের সদস্যরা তাদের প্রয়োজন ও ভাল-মন্দ অভিজ্ঞতার আলোকে ব্যবহার করেন। অনেকগুলো ছোট ছোট অর্গানাইজেশন মিলিত ভাবে এই ক্লাউড ব্যবহার করে।

৪। হাইব্রিড ক্লাউড: পাব্লিক, প্রাইভেট ও কমিউনিটি ক্লাউড মিলে তৈরী হয় হাইব্রিড ক্লাউড।








কিছু ক্লাউড প্রোভাইডারের লিস্ট -

Apple iCloud: এ্যাপল আইক্লাউড বিভিন্ন ধরনের সেবা দিয়ে থাকে; উল্লেখযোগ্য হচ্ছে আইটিউনস, আইবুকস, আইওএস ইত্যাদি। এ্যাপল কাস্টমার ৫ জিবি ফ্রী ব্যাকআপ স্পেস ও ওয়্যারলেস ব্যাকআপ পেয়ে থাকেন।



Amazon's Cloud Drive: এটি প্রকৃত পক্ষে অনলাইন স্টোরেজ লকার। স্টোরেজে গচ্ছিত ফাইল ফ্লাশ সমর্থিত যে কোন ডিভাইস দিয়ে একসেস করা যায়।


Google's 'cloud' suite: পিকাসো, জিমেইল ইত্যাদি সেবা দিয়ে থাকে। কমপক্ষে ১ জিবি ফ্রী স্পেস দিয়ে থাকে। ২০ জিবি অতিরিক্ত এক বছরের জন্য নিতে ৫ ডলার দিতে হয় এবং ১৬ টেরা বাইটের জন্য দিতে হয় ৪,০০০ ডলার প্রতি বছর।


Microsoft Windows Live: এটি এ্যামাজনস ক্লাউড ড্রাইভের মত এবং এর অন্তর্গত স্কাইড্রাইভে ২৫ জিবি ফ্রী স্পেস পাওয়া যায় ও ২৫ জিবি'র বেশী পাওয়ার সুযোগ নেই। উইন্ডোজ ফোন থেকে নেয়া ছবি, ভিডিও সরাসরি স্কাইড্রাইভে রাখা যায়।


Dropbox: এটি ওয়েবে যুক্ত একটি ফোল্ডার যা পিসি বা স্মার্ট ফোনের সাথে জীবন্ত রূপে থাকে। ড্রপবক্স গ্রাহক উইন্ডোজ, আইওএস, ম্যাক, লিনাক্স, এনড্রয়েড - সব প্লাটফর্মেই এটি ব্যবহার করতে পারে এবং গ্রাহক একটি ব্রাউজার দিয়ে যেকোন ডিভাইস থেকে ফাইলগুলো একসেস করতে পারেন।


Quickbase: ইনটুইট কুইকবেস একমাত্র বিজনেস ক্লাস অনলাইন ডাটাবেজ যা আল্ট্রা কাস্টমাইজ করা যায় এবং দ্রুত ও সহজে কোন কাজ করা যায়। এটি বিশ্বস্ত, সহজ ও অনেকগুলো এপ্লিকেশন যুক্ত ক্লাউড যা দ্রুত চালানো যায়।


JungleDisk: জঙ্গলডিস্ক এই লিস্টের একমাত্র সার্ভিস যা বিনামূল্যে পাওয়া যায় না এবং টেকনিক্যালি অনলাইন স্টোরেজ নয়। আপনাকে ২০ ডলার জঙ্গলডিস্ককে দিয়ে আমাজনসকে পে করতে হবে স্টোরেজ ও জঙ্গলডিস্কে ডাটা ট্রান্সফার করার জন্য।






ক্লাউড কম্পিউটিং সম্পর্কে কোন জটিল প্রশ্ন থাকলে মেঘ গণক ভাইয়াকে প্রশ্ন করে দেখতে পারেন।