কম্পিউটার বিজ্ঞান ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার জনক অ্যালান টিউরিং
২২ বছর বয়সে টিউরিং কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের কিংস কলেজ থেকে গণিতে স্নাতক হন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন ২৬ বছর বয়সে। ওই বছরই যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফিরে আসেন যুক্তরাজ্যে। এর কিছুদিন পরই শুরু হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। জার্মানদের গুপ্তসংকেতের পাঠোদ্ধার করতে গিয়ে ব্রিটিশরা গলদঘর্ম! বিশেষ করে জার্মান নৌবাহিনীর গুপ্তসংকেতের অর্থ কিছুতেই উদ্ধার করা যাচ্ছিল না। এগিয়ে এলেন টিউরিং। ১৯৩৯ সালের ডিসেম্বরে তিনি ‘বম্বি’ নামের এক বিশেষ যন্ত্র আবিষ্কার করেন। তাঁর এই যন্ত্রের সাহায্যেই জার্মান গুপ্তসংকেতের পাঠোদ্ধারে যুক্তরাজ্য সক্ষম হয়। বিভিন্ন প্রোগ্রামিং ভাষায় কম্পিউটারের কার্যসম্পাদনের জন্য লেখা বিভিন্ন প্রোগ্রামিং নির্দেশনা ইলেকট্রনিক স্মৃতিতে (র্যাম) সংরক্ষণের উপায়ও (স্টোরড প্রসিডিউর কম্পিউটিং) তাঁর আবিষ্কার।
১৯৫০ সালে টিউরিং ‘কম্পিউটিং মেশিনারি অ্যান্ড ইন্টেলিজেন্স’ নামে একটি নিবন্ধ লেখেন। এ নিবন্ধে তিনি প্রশ্ন রাখেন, ‘যন্ত্র কি চিন্তা করতে পারে?’ এ নিবন্ধের শেষ অংশে ‘টিউরিং পরীক্ষা’ নামক বিশেষ এক পরীক্ষার মাধ্যমে তিনি দেখান যে, ‘হ্যাঁ, যন্ত্র বিশেষ ব্যবস্থায় চিন্তা করতে পারে।’ ১৯৫২ সালের দিকে টিউরিং গাণিতিক জীববিজ্ঞানের প্রতি আকৃষ্ট হন। তাঁর আগ্রহের বিষয় ছিল ভ্রূণ অবস্থা থেকে নিয়ন্ত্রিত কোষ বিভাজনের মাধ্যমে জীবের পূর্ণাঙ্গ অবয়বপ্রাপ্তির ক্রিয়া-কৌশল ও এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট গাণিতিক বিষয়াদি। এ ছাড়া তিনি উদ্ভিদের পত্রবিন্যাসে ফিবোনাকি রাশিমালার দৃশ্যমানতা ও অস্তিত্ব নিয়ে কাজ করেন। তাঁর এসব কাজ গাণিতিক জীববিজ্ঞানে অতি সুদূরপ্রসারী ও প্রভাব বিস্তারকারী হিসেবে বিবেচিত হয়।
অ্যালান টিউরিংয়ের জীবনের সূচনা কিন্তু উপমহাদেশেই। টিউরিং যখন তাঁর মায়ের গর্ভে আসেন, তখন তাঁর বাবা-মা থাকতেন ভারতের ওডিশা রাজ্যের ছত্রপুর শহরে। কিন্তু এই দম্পতি চাচ্ছিলেন, তাঁদের সন্তান যেন ইংল্যান্ডে ভূমিষ্ঠ হয়। তাই তাঁরা ফিরে যান লন্ডনে। ১৯১২ সালের ২৩ জুন লন্ডনে তাঁদের ঘর আলো করে জন্ম নেন টিউরিং। ১৯৫৪ সালের ৭ জুন টিউরিং মাত্র ৪২ বছর বয়সে সায়ানাইডমিশ্রিত আপেল খেয়ে মারা যান। কেউ কেউ একে আত্মহত্যা বললেও তাঁর মায়ের ভাষ্য অনুযায়ী, কাজের ঘোরে আপেলে ভুলবশত সায়ানাইড লেগে গিয়েছিল।
নিউইয়র্কভিত্তিক বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন কম্পিউটার সমিতি অ্যাসোসিয়েশন ফর কম্পিউটিং মেশিনারি (এসিএম) ১৯৬৬ সালে কম্পিউটার বিজ্ঞানের জনক অ্যালান টিউরিংয়ের নামে প্রবর্তন করে কম্পিউটার বিজ্ঞানের সর্বোচ্চ সম্মানজনক পুরস্কার ‘টিউরিং পুরস্কার’। ১৯৯৯ সালে বিশ্বখ্যাত টাইম ম্যাগাজিনের করা ‘বিংশ শতাব্দীতে পৃথিবীর সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ১০০ জন ব্যক্তির একজন ছিলেন টিউরিং। ২০০২ সালে বিবিসি পরিচালিত এক সমীক্ষায় ১০০ মহান ইংরেজের তালিকায় টিউরিংয়ের অবস্থান ছিল ২১তম। আর যুক্তরাষ্ট্রের প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের চোখে তাদের সাবেক ছাত্রদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যময় দুজন ছাত্রের একজন হলেন টিউরিং।
মাত্র ৪২ বছর বয়সে টিউরিং মারা যান। তবে স্বল্পায়ু জীবনেই তিনি কম্পিউটার বিজ্ঞানকে বিভিন্নভাবে সমৃদ্ধ করে গেছেন। তাঁর প্রাজ্ঞ পর্যবেক্ষণ, গবেষণা ও আবিষ্কার সভ্যতা ও মানুষের চলার পথকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করেছে এবং আজও করে চলেছে।
তথ্যসূত্র: উইকিপিডিয়া ও ওয়েবসাইট
গুগল ম্যাপের প্রতিষ্ঠাতাদের একজন ব্রেট টেইলর
কম্পিউটার প্রকৌশলী টেইলর বিশ্বখ্যাত স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটার বিজ্ঞানে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর আর্জন করেন। উদ্ভাবনী প্রতিভা ছিল ছেলেবেলা থেকেই। গুগল ম্যাপ তৈরির পর এই প্রতিভা সবার নজরে পড়ল। গুগল ম্যাপের জন্য মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনটিও তাঁর তৈরি।
২০০৭ সালে ছেড়ে দেন সার্চ সাম্রাজ্য। সঙ্গে সহকর্মী জিম নরিসও গুগল ছাড়লেন। দুজনে মিলে তৈরি করলেন সোশ্যাল নেটওয়ার্ক ‘ফ্রেন্ডস ফিড’। ফেইসবুকের জন্য ২০০৯ সালে পাঁচ কোটি ডলারে ফ্রেন্ডস ফিড কিনে নেন জুকারবার্গ। টেইলরকে দেন প্রতিষ্ঠানের প্রধান কারিগরি নির্বাহীর পদ।
ফেইসবুকের অধিকাংশ মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনই টেইলর তৈরি করেন। গুগল ম্যাপ. ফ্রেন্ডস ফিড আর ফেইসবুকের সফলতার পর টেইলরের হাতে নতুন কোন সোনা ফলতে যাচ্ছে সেদিকেই তাকিয়ে এখন প্রযুক্তিবিশ্ব।
বিটটরেন্টের জনক ব্র্যাম কোহেন
এ সফটওয়্যারটি তৈরি করেন যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত কম্পিউটার প্রোগ্রামার ব্র্যাম কোহেন। সফটওয়্যারটি তৈরির মাধ্যমে তিনি প্রথম পেয়ার-টু-পেয়ার ফাইল শেয়ারিং সেবা চালু করেন। কোহেনের জন্ম নিউ ইয়র্কের ম্যানহাটন শহরে। মাত্র পাঁচ বছর বয়সেই তিনি কম্পিউটার প্রোগ্রামিং শেখা শুরু করেন। যুক্তরাষ্ট্রের স্টাভসেন্ট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পড়ার সময় তিনি জাতীয় গণিত অলিম্পিয়াডে অংশ নিয়ে ‘আমেরিকান ইনভাইটেশনাল ম্যাথমেটিকস’-এ উত্তীর্ণ হন। স্নাতক পড়ার সময় লেখাপড়া ছেড়ে ডটকম নিয়ে কাজ শুরু করেন।
এরপর ইন্টারনেট থেকে ফাইল ডাউনলোড প্রযুক্তি নিয়ে কাজ শুরু করেন মজোনেশন নামের একটি প্রতিষ্ঠানে। এখানেই তিনি ‘বিটটরেন্ট’ তৈরি করেন। ২০০১ সালের জুলাই থেকে বিটটরেন্ট নিয়ে প্রচারণা শুরু করেন।
ব্যক্তিগত জীবনে ব্র্যাম কোহেন তিন সন্তানের জনক।
ম্যাশেবলের জনক পিটি ক্যাশমোর
মাত্র ১৯ বছর বয়সে ম্যাশেবলের কাজে হাত দেন। ইচ্ছা ছিল নিজ উদ্যোগে সংবাদনির্ভর একটি ব্লগ চালু করা। তবে ব্লগটি চালু করার পর তিনি একটি দল তৈরির প্রয়োজনীয়তা বোধ করলেন। একসময় জোগাড়ও করে ফেললেন ৪০ জন ব্লগার; সঙ্গে কিছু স্বেচ্ছাসেবীও, যাঁরা ব্লগিং করে ম্যাশেবলকে সব সময় চাঙ্গা রাখবে।
ক্যাশমোর বলেন, ‘ম্যাশেবল শব্দটি এসেছে ম্যাশআপ থেকে। বেশির ভাগ সোশ্যাল মিডিয়ার ব্লগগুলো এককেন্দ্রিক। আমি এমন একটি ব্লগ তৈরি করতে চেয়েছি, যেখানে সবাই ছবি ও ভিডিও আপলোড করতে, গল্প লিখতে এবং ভালোলাগার বিষয় শেয়ার করতে পারে। তাই এমন একটি নামই বেছে নেওয়া হয়েছে।’
এত কম বয়সে এমন উদ্যোক্তা হওয়ার সাহস দেখানোর নজির খুব কমই আছে। তাই টাইম ম্যাগাজিন ২০১০ সালের সেরা ১০০ উদ্যোক্তার মধ্যে পিটি ক্যাশমোরকে রেখেছে।
ক্যাশমোর বর্তমানে ম্যাশেবলের প্রতিষ্ঠাতা নির্বাহী হিসেবে কাজ করছেন।
ফিল কাটজ
কম্পিউটারের বিভিন্ন ধরনের ফাইল ফরম্যাটের মধ্যে বেশ জনপ্রিয় একটি ফাইল ফরম্যাট হচ্ছে জিপ। যেকোনো ধরনের ফাইলকে সুরক্ষিত রাখার জন্য ব্যবহূত হয়ে থাকে এই জিপ ফাইল ফরম্যাট। এই জিপ ফাইল ফরম্যাটের নির্মাতা হলেন ফিল কাটজ। যুক্তরাষ্ট্রের এই কম্পিউটার প্রোগ্রামার জন্ম নেন ১৯৬২ সালের ৩ নভেম্বর। কাটজ তার স্নাতক পড়ালেখা সম্পন্ন করেন ইউনিভার্সিটি অব উইলকনসিন-মিলওয়াওকি থেকে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে। স্নাতক শেষ করার পরেই কাটজ প্রোগ্রামার হিসেবে কাজ শুরু করেন অ্যালেন-ব্র্যাডলি কোম্পানিতে। পরে ১৯৮৬ সালে তিনি গ্রেসফট নামে আরেকটি প্রতিষ্ঠানে যোগ দেন। ওই বছরেই তিনি পিকেওয়্যার নামে নিজস্ব একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। যদিও তিনি গ্রেসফট ত্যাগ করেন ১৯৮৭ সালে। পরে নিজের প্রতিষ্ঠান থেকেই তিনি ১৯৮৯ সালে তৈরি করেন জিপ ফাইল ফরম্যাট। তবে প্রথমে তিনি নিজের প্রতিষ্ঠানে ‘পিকেজিপ’ নামে এই ফাইল ফরম্যাট তৈরি করেন। পরে তিনি এটি সকলের ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করে দেন। এই শেয়ারওয়্যারের জন্যই তিনি বিখ্যাত হয়ে রয়েছেন পৃথিবী ব্যাপী। আজও ফাইল বহনে অত্যন্ত জনপ্রিয় এই জিপ ফরম্যাট। ২০০০ সালের ১৪ এপ্রিল মাত্র ৩৭ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন এই প্রতিভাবান প্রোগ্রামার।বব কান
তার পুরো নাম রবার্ট ইলিয়ট কান। ১৯৩৮ সালের ২৩ ডিসেম্বরে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। আজকের এই ইন্টারনেটনির্ভর বিশ্বে ‘টিসিপি’ এবং ‘আইপি’ নামের দুইটি অত্যন্ত পরিচিত শব্দের সাথে জড়িয়ে রয়েছে তার নাম। বব কান নামেই পরিচিত এই প্রকৌশলী এবং কম্পিউটার বিজ্ঞানী ভিনটন জি কার্ফের সাথে উদ্ভাবন করেন ইন্টারনেটের মৌলিক যোগাযোগের দুইটি গুরুত্বপূর্ণ প্রটোকল ট্রান্সমিশন কন্ট্রোল প্রটোকল (টিসিপি) এবং ইন্টারনেট প্রটোকল (আইপি)। কান ১৯৬০ সালে সিটি কলেজ অব নিউইয়র্ক থেকে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে বিইই ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর তিনি ১৯৬২ ও ১৯৬৪ সালে প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যথাক্রমে এমএ এবং পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। গ্রাজুয়েট স্কুলে লেখাপড়া শেষ করেই তিনি এটিঅ্যান্ডটি বেল ল্যাবরেটরিজে কাজ করতে শুরু করেন। পরে তিনি এমআইটিতে সহকারি অধ্যাপক হন। এরপর তিনি বোল্ট, বেরানেক অ্যান্ড নিউম্যান (বিবিএন)-এ কাজ করেন। এখানেই তিনি ইন্টারফেস ম্যাসেজ প্রসেসর (আইএমপি) উদ্ভাবন করেন। পরে তিনি ডারপাতেও কাজ করেন। সেখান থেকে বের হয়ে তিনি কর্পোরেশন ফর ন্যাশনাল রিসার্চ ইনিশিয়েটিভ গঠন করেন ১৯৮৬ সালে। অলাভজনক এই প্রতিষ্ঠানে তিনি চেয়ারম্যান, সিইও, প্রেসিডেন্টসহ বিভিন্ন পদে কাজ করেন। তার বিভিন্ন গবেষণা ও উদ্ভাবনের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি প্রেসিডেন্সিয়াল মেডেল অব ফ্রিডম এবং ট্যুরিং অ্যাওয়ার্ডসহ আরও বিভিন্ন সম্মানজনক পুরস্কারে ভূষিত হন।রিমোট কন্ট্রোলের উদ্ভাবক ইউজিন জে পলি
পলির জন্ম শিকাগোতে ১৯১৫ সালের ২৯ নভেম্বর। শিকাগোর জনপ্রিয় সিটি কলেজ আর আরমোর ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে পড়াশোনা করেছেন তিনি। ১৯৩৫ সালে জেনিথ ইলেকট্রনিকসে স্টকবয় হিসেবে চাকরি নেন। এ প্রতিষ্ঠানের জন্য একটি ইলেকট্রনিকস ক্যাটালগ তৈরি করেন তিনি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জেনিথ ছেড়ে মার্কিন সেনাবাহিনীর রাডার পরিচালনায় সহযোগী হিসেবে দায়িত্ব নেন। রাডারের কাজ করতে গিয়েই তাঁর মাথায় রিমোট কন্ট্রোল সিস্টেমের ধারণা আসে। ১৯৫৫ সালে প্রথম ফ্ল্যাশমেটিকের মাধ্যমে আলো দিয়ে এমন এক যন্ত্র তৈরি করেন, যা দিয়ে টেলিভিশনের ফটোসেল নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। এ যন্ত্রটির নামই রিমোট কন্ট্রোল।
যুদ্ধশেষে তিনি আবার জেনিথ ইলেকট্রনিকসে পণ্য প্রকৌশলী হিসেবে যোগ দেন। পরে তাঁকে এ বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়। পলি রেডিও এবং ভিডিও ডিস্ক নিয়েও কাজ করেছেন। এখানে তিনি মোট ১৮টি পেটেন্ট অর্জন করেছেন।
১৯৮২ সালে চাকরি থেকে অবসরে গেলেও গবেষণা বন্ধ করেননি। জীবনের বহু অর্জনের মধ্যে ওয়্যারলেস রিমোট কন্ট্রোলের উদ্ভাবক হিসেবে ১৯৯৬ সালে পেয়েছেন ‘টেকনোলজি ও ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যামি অ্যাওয়ার্ড’।
ক্রিশ্চিয়ান অয়েরস্টেড
উনবিংশ শতাব্দী পদার্থ এবং রসায়ন বিজ্ঞানের নানান গবেষণা আর উদ্ভাবনের জন্য বিখ্যাত হয়ে রয়েছে। এসময়ের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি উদ্ভাবন হচ্ছে তাড়িত-চৌম্বকবিদ্যা বা ইলেকট্রোম্যাগনেটিজম। আজকের আধুনিক প্রযুক্তির অন্যতম মূলেই রয়েছে বিদ্যুতের সাথে চৌম্বক ক্ষেত্রের এই সম্পর্ক। এই ইলেকট্রোম্যাগনেটিজম উদ্ভাবনে যে বিজ্ঞানিটির অবদান রয়েছে শুরুর দিক থেকেই, তিনি হ্যান্স ক্রিশ্চিয়ান অয়েরস্টেড। ১৭৭৭ সালের ১৪ আগস্ট ডেনমার্কে জন্ম নেয়া এই পদার্থ এবং রসায়নবিদ ইউনিভার্সিটি অফ কোপেনহেগেনে পড়ালেখা করেন। জার্মানিতে জন উইলিয়াম রিটারের সাথে তার দেখা হয় এবং তার কাছ থেকেই তিনি বিদ্যুতের সাথে চৌম্বক ক্ষেত্রের সম্পর্ক নিয়ে গবেষণা করার উত্সাহ পান। পরে তিনি এটি নিয়েই গবেষণা করতে থাকেন এবং বিদ্যুতের সাথে চৌম্বকের সাথে সম্পর্ক সর্বপ্রথম তিনিই আবিস্কার করেন।চার্লস ব্যাবেজ
প্রযুক্তির ইতিহাসের অন্যতম এক স্মরণীয় ব্যক্তিত্বের নাম চার্লস ব্যাবেজ। তিনি ছিলেন একাধারে একজন গণিতবিদ, দার্শনিক, আবিষ্কারক এবং যন্ত্রপ্রকৌশলী। তিনিই সর্বপ্রথম প্রোগ্রামযোগ্য কম্পিউটারের ধারণার সূচনা করেন। ইতিহাসের প্রথম যান্ত্রিক কম্পিউটার আবিষ্কারের কৃতিত্বও তার। তার উদ্ভাবিত এই কম্পিউটারকে কেন্দ্র করেই পরবর্তীতে আরো জটিল এবং আধুনিক ডিজাইনের কম্পিউটার তৈরি হয়। প্রথম সেই যান্ত্রিক কম্পিউটারের ডিজাইন এখনও লন্ডন সায়েন্স মিউজিয়ামে প্রদর্শিত হয়। প্রযুক্তির সীমাবদ্ধতার কারণে তার উদ্ভাবিত যন্ত্রটি সেই সময়ে সাফল্যের সাথে কাজ করতে পারেনি, তবে ১৯৯১ সালে তার ডিজাইন থেকেই সফলভাবে কর্মক্ষম একটি যন্ত্র তৈরি করা হয়। প্রতিভাধর এই ব্যক্তিত্বের সম্মানে বিশ্ববিখ্যাত বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। এছাড়া তার স্মরণে বিভিন্ন স্থাপনা ও রাস্তার নাম রয়েছে। তার জীবতকালে এবং মৃত্যুপরবর্তী সময়েও তাকে নানান পুরস্কারে ভূষিত করা হয়। তার লেখা গ্রন্থগুলো এখন পাওয়া যায় ইন্টারনেটে। ১৭৯১ সালে জন্ম নেয়া এই মনীষী মৃত্যুবরণ করেন ১৮৭১ সালে। তার সম্পর্কে জানান যাবে উইকিপিডিয়া থেকে অথবা www.charlesbabbage.net সাইটে। -সংগ্রহজোহান্স গুটেনবার্গ
আজ থেকে কয়েক শ বছর আগে আমরা এখন যে বই পড়ছি, তা মানুষের কল্পনাতেও ছিল না। তখন বই বলতে ছিল কেবল কাগজ বা কাপড়ের উপর মানুষের হাতে লেখা বই। ছাপা বইয়ের আধুনিক ধারণাটির প্রবর্তক যে মানুষটি, তার নাম জোহান্স গুটেনবার্গ। জার্মান এই উদ্ভাবকের পুরো নাম জোহান্স হেন্সফ্লিশ জুর লাদেন জুম গুটেনবার্গ। আনুমানিক ১৩৯৮ সালে জন্ম নেয়া গুটেনবার্গ পৃথিবীকে প্রথম পরিচয় করিয়ে দেন প্রিন্টিং প্রেসের ধারণার সাথে ১৪৩৯ সালে। ছাপার জন্য অক্ষর তৈরি, তেল নির্ভর ছাপার কালি এবং কাঠের প্রেস সিস্টেমেরও তিনিই প্রবর্তক। তার ছাপাখানা থেকেই প্রথম সকলের পড়ার জন্য বিপুল পরিমাণ বই ছাপার কাজ শুরু হয়। ১৪৫০ থেকে ১৪৫৫ সালের মধ্যে তার ছাপাখানা বেশ কিছু বই ছাপা হয়। তার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ছিল ৪২ লাইনের গুটেনবার্গ বাইবেল। রেনেসাঁতে তার এই বই ছাপার প্রযুক্তি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল। জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রসারে তার এই প্রযুক্তি এনে দেয় নতুন গতিবেগ। ১৪৬৮ সালে আনুমানিক ৭০ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন জোহান্সবার্গ। -সংগ্রহআলেক্সান্ডার গ্রাহাম বেল
আধুনিক যুগে এসে মোবাইল ফোনের কদর বিপুল পরিমাণে বেড়ে গেলেও প্রযুক্তি বিশ্বের অন্যতম যুগান্তকারী আবিষ্কার হলো টেলিফোন বা দূরালাপনী। প্রযুক্তি ইতিহাসের দীর্ঘদিন ধরে বেশ কয়েকজন টেলিফোন নিয়ে গবেষণা চালালেও সর্বপ্রথম সার্থাকভাবে যিনি ব্যবহারিক টেলিফান তৈরি করেছেন, তার নাম আলেক্সান্ডার গ্রাহাম বেল। ১৮৪৭ সালে জন্ম নেয়া গ্রাহাম বেল একাধারে বিজ্ঞানী, গবেষক, প্রকৌশলী, আবিষ্কারক এবং উদ্ভাবক। তার পিতা, পিতামহ এবং ভাই জড়িত ছিলেন বাক সম্পর্কিত গবেষণায়। উপরন্তু মা এবং স্ত্রী ছিলেন বধির। এসব কিছুই তাকে শ্রবণ যন্ত্র নিয়ে গবেষণার অনুপ্রেরণা প্রদান করে যার ফলশ্রুতিতে তিনিই টেলিফোন নির্মাতা হিসেবে সফল হয়ে ওঠেন। ১৮৭৬ সালে তিনি টেলিফোনের প্যাটেন্ট লাভ করেন। পরবর্তীতে তিনি আলোক টেলিযোগাযোগ, হাইড্রোফয়েল এবং অ্যারোনটিকস বিষয়ে নানান যুগান্তকারী গবেষণা করেন। সুবিখ্যাত ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক সোসাইটির তিনি অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন। ১৯২২ সালে মৃত্যু বরণ করেন তিনি। -সংগ্রহফ্রিটজ প্লিউমার
আজকাল আমরা গান শোনার জন্য নানান ধরনের যন্ত্র ব্যবহার করে থাকি। আধুনা কম্পিউটার নির্ভর এই বিশ্বে এখন মাল্টিমিডিয়া ফোন বা পিসি বা ল্যাপটপই গান শোনার প্রধান মাধ্যম। তবে অডিও জগতে সর্বপ্রথম প্রযুক্তির নাম ম্যাগনেটিক টেপ। আর সেই যুগান্তকারী প্রযুক্তির আবিস্কারক ফ্রিটজ প্লিউমার। জার্মান-অস্ট্রিয়ান এই প্রকৌশলীই পৃথিবীকে সর্বপ্রথম শব্দ ধারণের সেই প্রযুক্তির সাথে পরিচয় করিয়ে দেন। বিভিন্ন ধরনের পদার্থ নিয়ে গবেষণা চালিয়ে শেষ পর্যন্ত ১৯২৭ সালে পাতলা কাগজের উপর আয়রন অক্সাইডের আবরণ তৈরি করে একটি টেপ তৈরিতে সক্ষম হন। পরবর্তীতে তিনি ১৯৩২ সালে প্রথম ব্যবহারিক টেপ রেকর্ডার তৈরি করেন। এই যন্ত্রের নাম দেয়া হয় ম্যাগনেটোফোন। ১৮৮১ সালে জন্ম নেয়া এই আবিস্কারক মৃত্যু বরণ করেন ১৯৪৫ সালে। -সংগ্রহস্যার জে জে থমসন
পদার্থের অভ্যন্তরীণ বৈশিষ্ট্য নিয়ে কাজ করতে গেলে এবং পদার্থকে নানানভাবে ব্যবহার করতে গেলে ইলেকট্রন এবং আইসোটোপের ধারণার সঠিক ব্যবহারের কোনো বিকল্প নেই। ইলেকট্রন এবং আইসোটোপ আবিস্কারের কৃতিত্ব যে মহান পদার্থ বিজ্ঞানীর তার নাম স্যার জোসেফ জন থমসন। পদার্থের মৌলিক কণিকা নিয়ে বেশ কয়েকজন বিজ্ঞানী তাত্পর্যপূর্ণ কাজ করলেও সফলভাবে ইলেকট্রন আবিস্কার করতে সক্ষম হন থমসন। ক্যাথোড রশ্মি নিয়ে গবেষণার সময় তিনি এটি আবিস্কার করেন। ১৮৯৭ সালে তিনি এ সংক্রান্ত গবেষণায় সফলতা লাভ করেন। পরবর্তীতে তিনি গবেষণা অব্যাহত রাখেন এবং আইসোটোপ আবিস্কার করেন। এছাড়া তিনি ম্যাস স্পেকট্রোমিটারও আবিস্কার করেন। ১৯০৬ সালে তিনি নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। তিনি রয়্যাল সোসাইটির ফেলো এবং সম্মানসূচক অর্ডার অফ মেরিট লাভ করেন। -সংগ্রহউইলেম এইনথোভেন
প্রযুক্তির সাথে চিকিত্সা বিজ্ঞানের সম্পর্ক অনেক আগে থেকেই। প্রযুক্তির সহায়তায় চিকিত্সা বিজ্ঞানের নানান প্রয়োজনীয় উপকরণ এবং যন্ত্র তৈরি করা হয়েছে। এসব যন্ত্রের মধ্যে অন্যতম একটি ইলেকট্রোকার্ডিওগ্রাফ। হূদযন্ত্রের সংকোচন এবং প্রসারণের তথ্য বিশ্লেষণের মাধ্যমে যে যন্ত্রটি হূদপিন্ডের সুস্থতার তথ্যটি জানিয়ে দিতে সক্ষম মানুষকে। সফলভাবে ব্যবহারিক ইলেকট্রোকার্ডিওগ্রাফ প্রথম তৈরি করেন যে বিজ্ঞানী, তিনি উইলেম এইনথোভেন। ১৮৬০ সালের ২১ মে নেদারল্যান্ডে জন্ম নেয়া এইনথোভেন পেশায় ছিলেন মূলত একজন চিকিত্সক এবং শারীরবিদ্যার গবেষক। ইলেকট্রোকার্ডিওগ্রাফের মতন বেশ কিছু যন্ত্র তার সময়েই ছিল। তবে সেগুলো হূদস্পন্দন যথার্থভাবে পরিমাপে সক্ষম ছিল না আর সেই যন্ত্রগুলো বসাতে হত সরাসরি হূদপিন্ডের সাথে। এইনথোভেন প্রথম গ্যালভানোমিটার ব্যবহার করে সফলভাবে ইলেকট্রোকার্ডিওগ্রাফ তৈরি করতে সমর্থ হন। ১৯০৩ সালে তিনি এই যুগান্তকারী যন্ত্রটি তৈরি করেন। এই অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ ১৯২৪ সালে তাকে চিকিত্সাবিদ্যায় নোবেল পুরস্কারে ভূষিত করা হয়। -সংগ্রহল্যারি ওয়াল
যুক্তরাষ্ট্রের কম্পিউটার বিজ্ঞানী, প্রোগ্রামার এবং লেখক ল্যারি ওয়াল। তার নানান ধরনের গবেষণা থাকলেও তিনি তার উদ্ভাবিত পার্ল প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজের জন্যই বিশ্বব্যাপী বিখ্যাত হয়ে ওঠেন। ১৯৫৪ সালে জন্ম নেওয়া ল্যারি ওয়াল সিয়াটল প্যাসিফিক ইউনিভার্সিটি থেকে রসায়ন এবং সঙ্গীত বিষয়ে পড়ালেখা শুরু করেন। পরে তিনি চিকিত্সা বিজ্ঞান নিয়েও কিছু পড়ালেখা করেন এবং ছাড়া ছাড়াভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটিং সেন্টারেও কাজ করেন। সবশেষে তিনি ন্যাচারাল এন্ড আর্টিফিসিয়াল ল্যাংগুয়েজের উপর স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। পরবর্তীতে তিনি নাসার একটি প্রকল্পেও কাজ করার জন্য যোগদান করেন। তিনি এবং তার স্ত্রী গ্র্যাজুয়েট স্কুলে থাকা অবস্থাতেই ভাষাতত্ত্ব নিয়ে কাজ করতে থাকেন। তারা তখন একটি কৃত্রিম ভাষাও তৈরি করেন। তবে সেটাকে পূর্ণাঙ্গ রূপ দিতে পারেননি। পরবর্তীতে ১৯৮৭ সালে ইউনিক্স স্ক্রিপ্টিংয়ের কাজের জন্য তৈরি করেন ‘পার্ল’ নামে একটি হাই-লেভেল প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ। এই প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজের কারণেই তিনি বিখ্যাত হয়ে রয়েছেন প্রযুক্তি বিশ্বে। -সংগ্রহআলসেন্দ্রো ভোল্টা
ইতালির বিখ্যাত পদার্থবিদ এবং বিজ্ঞানী আলসেন্দ্রো ভোল্টা ‘বিদ্যুত্ কোষ’ আবিস্কারের জন্য বিশ্বব্যাপী বিখ্যাত হয়ে রয়েছেন। তার পুরো নাম কাউন্ট আলসেন্দ্রো গুইসেপ অ্যনাসতাসিও জেরোলামো আমবারটো ভোল্টা। ১৭৪৫ সালে জন্ম নেয়া এই পদার্থবিদ ১৭৭৪ সালে কোমো শহরের রয়্যাল স্কুল এ পদার্থবিদ্যার শিক্ষক হিসেবে তার কর্মজীবন শুরু করেন। এক বছরের মধ্যে তিনি ইলেকট্রোফোরাস নামে একটি বিশেষ ডিভাইস তৈরি করতে সক্ষম হন যা স্থির বিদ্যুত্ উত্পাদন করতে পারতো। ১৭৭৬-৭৭ সালে তিনি বিভিন্ন রাসায়নিক দ্রব্যাদি নিয়ে গবেষণা করতে শুরু করেন এবং এসময় তিনি মিথেন গ্যাস আবিস্কার করেন। পরে তিনি মিথেন গ্যাসের সাহায্যে ইগনিশন নিয়ে কাজ করেন এবং ক্যাপাসিটেন্স বা ধারকত্ব নিয়েও কাজ করেন। লুইগি গ্যালভানি’র বিখ্যাত ব্যাঙ এর পরীক্ষার তিনি সঠিক ব্যাখ্যা প্রদান করেন। এবং এটি নিয়ে গবেষণার ধারাবাহিকতায় তিনি ভোল্টা’র বিদ্যুত্ কোষ তৈরি করেন। এসময় তিনি তড়িত্-রাসায়নিক সিরিজ এবং গ্যালভানিক কোষের তড়িচ্চালক বলের সূত্রও উদ্ভাবন করেন সফলতার সাথে। -সংগ্রহগুয়েলমো মার্কোনি
আজকের এই তথ্যপ্রযুক্তির যুগে এসে রেডিও বা বেতারের ব্যবহার অনেকটাই কমে গেছে। কম্পিউটার বা টেলিভিশনের আবিস্কারের পূর্বে মানুষের কাছে অন্যতম জনপ্রিয় ছিল এই যোগাযোগ মাধ্যম। আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থার পেছনেও গুরুত্বপূর্ণ স্থানে রয়েছে এই বেতার ব্যবস্থার। এই বেতার ব্যবস্থার অন্যতম জনক বলা হয় ইতালিয়ান উদ্ভাবক, বিজ্ঞানী, গবেষক গুয়েলমো মার্কোনিকে। ১৮৭৪ সালের ২৫ এপ্রিল জন্ম নেয়া এই বিজ্ঞানী স্কুলে না গেলেও পরিবারের উদ্যোগে একটি ল্যাবে শিক্ষাগ্রহণ করতে থাকেন। শুরু থেকেই বিজ্ঞান এবং বিদ্যুত্ বিষয়ে তার আগ্রহ লক্ষ করা যায়। সেই সময়ে হেনরিক হার্জ ইলেকট্রোম্যাগনেটিক রেডিয়েশন নিয়ে কাজ করে আলোচনায় চলে আসেন। তা থেকেই উত্সাহিত হয়ে মার্কোনি বিদ্যুতের নানান কাজ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে যেতে থাকেন এবং তার কাজের মূল লক্ষ ছিল তার ব্যবহার ছাড়াই টেলিগ্রাফির কাজ করা। এই কাজ করতে গিয়েই তিনি বেতারের কাজটি সফলভাবে উদ্ভাবন করতে সক্ষম হন। মাত্র বিশ বছর বয়সেই কাজ শুরু করেন মার্কোনি। রেডিও উদ্ভাবনের পরেও তিনি এই সংশ্লিষ্ট আরও নানান ডিভাইস এবং তত্ত্ব নিয়ে গবেষণা চালিয়ে যান। -সংগ্রহঅ্যাপল ডিভাইসে অভ্র
বিভিন্ন ডিভাইসে বাংলা লেখার সুযোগ থাকলেও অ্যাপল’র বিভিন্ন ডিভাইসে (যেমন, আইফোন, আইপ্যাড, আইপড ইত্যাদি) বাংলা লেখার জন্য ভালো সফটওয়্যার বা অ্যাপ্লিকেশনের অভাব রয়েছে। তবে বাংলা লেখার জনপ্রিয় ওপেন সোর্স সফটওয়্যার অভ্র নিয়ে এসেছে অ্যাপল ডিভাইসে বাংলা লেখার সুযোগ। অ্যাপল ডিভাইসের সাফারি ব্রাউজার থেকে http://www.VistaArc.com/iAvroPad সাইটে গেলেই পাওয়া যাবে ‘আইঅভ্রপ্যাড’ অ্যাপ্লিকেশন। এখান থেকেই আপনি আপনার ইচ্ছেমত বাংলায় টাইপ করতে পারবেন যে কোনো কিছু। প্রচলিত ফোনেটিক পদ্ধতি ব্যবহার করেই টাইপ করা যাবে এর মাধ্যমে। -সংগ্রহজন ব্যাকাস
কম্পিউটার প্রোগ্রামিং এর মাধ্যমে যে কয়েকজন বিজ্ঞানী ইতিহাসকে সমৃদ্ধ করে গেছেন, তার মধ্যে অন্যতম একজন জন ব্যাকাস। ১৯২৪ সালের ৩ ডিসেম্বর আমেরিকায় জন্ম নেয়া এই কম্পিউটার বিজ্ঞানীর নেতৃত্বেই উদ্ভাবিত হয় বিশ্বের প্রথম বহুল ব্যবহূত হাই-লেভেল প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ ‘ফোরট্রান’। এছাড়া প্রোগ্রামিং-এ ব্যবহূত সিনট্যাক্স নোটেশন সিস্টেম ‘ব্যাকাস-নর ফরম (বিএনএফ)’-এর উদ্ভাবকও তিনি। ‘ফোরট্রান’ উদ্ভাবনে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য জন ব্যাকাসকে ১৯৬৭ সালে আইট্রিপলই থেকে ‘ম্যাকডোয়েল অ্যাওয়ার্ড’ প্রদান করা হয়। এছাড়া ১৯৭৫ সালে তিনি ‘ন্যাশনাল মেডেল অফ সায়েন্স’ এবং ১৯৭৭ সালে ‘ট্যুরিং অ্যাওয়ার্ড’ লাভ করেন। তিনি মৃত্যুবরণ করেন ২০০৭ সালের ১৭ মার্চ। -সংগ্রহগর্ডন মুর
প্রযুক্তির ইতিহাসের এক কিংবদন্তী ব্যক্তিত্বের নাম গর্ডন মুর। কম্পিউটিং হার্ডওয়্যারের ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি ব্যবহূত বিখ্যাত ‘মুরস ল’-এর উদ্ভাবক গর্ডন মুর। বিশ্বব্যাপী প্রসেসর নির্মাণের সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠান ‘ইন্টেল’-এরও সহ-প্রতিষ্ঠাতা গর্ডন মুর। ১৯২৯ সালের ৩ জানুয়ারি সানফ্রান্সিসকোতে জন্মগ্রহণ করেন মুর। ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া, বার্কলে থেকে তিনি রসায়নে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। পরে তিনি ক্যালিফোর্নিয়া ইন্সটিটিউট অফ টেকনোলজি (ক্যালটেক) থেকে রসায়নে (মাইনর বিষয় পদার্থ বিজ্ঞান) পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। তার পোস্ট-ডক্টরাল কাজের জন্য তিনি বেছে নেন জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাপ্লাইড ফিজিক্স ল্যাবরেটরিকে। এখানে তিনি ১৯৫৬ সাল পর্যন্ত কাজ করেন। এরপর তিনি যুক্ত হন ক্যালটেক-এর প্রাক্তণ গবেষক উইলিয়াম শকলে’র সাথে এবং ‘শকলে সেমিকন্ডাক্টার ল্যাবরেটরি’তে তিনি কাজ করতে শুরু করেন। কিন্তু এখান থেকে গর্ডন মুরসহ আটজন গবেষক একসাথে শকলে ল্যাবরেটরিজ ত্যাগ করেন এবং ১৯৫৭ সালে ‘ফেয়ারচাইল্ড সেমিকন্ডাক্টার’ নামের প্রতিষ্ঠান তৈরি করেন। এখানে কাজ করতে করতেই মুর পরিচিত হন রবার্ট নয়েস’র সাথে। আর তারা একত্রে ১৯৬৮ সালে প্রতিষ্ঠা করেন ‘ইন্টেল কর্পোরেশন’। প্রতিষ্ঠার পর থেকে তিনি এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। পরে ১৯৭৫ সালে তিনি ইন্টেল’র প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিযুক্ত হন। ১৯৭৯ সালে তিনি ইন্টেল’র চেয়ারম্যান অফ দ্য বোর্ড এবং চিফ এক্সিকিউটিভ নির্বাচিত হন এবং ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত তিনি এই দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৭ সালে তাকে ইন্টেল কর্পোরেশনের সম্মানসূচক ‘চেয়ারম্যান এমারিটাস’ উপাধি প্রদান করা হয়। ইন্টেলকে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে গর্ডন মুর’র অবদান অনস্বীকার্য। তার অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি প্রচুর পুরস্কার লাভ করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে ন্যাশনাল মেডেল অফ টেকনোলজি, প্রেসিডেন্সিয়াল মেডেল অফ ফ্রিডম, আইট্রিপলই মেডেল অফ অনার প্রভৃতি। এ ছাড়া তিনি ক্যালটেক, ন্যাশনাল একাডেমি অফ ইঞ্জিনিয়ারিং, কম্পিউটার হিস্টোরি মিউজিয়ামসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ফেলো এবং সদস্য হিসেবে রয়েছেন। গর্ডন মুর এবং তার স্ত্রী ক্যালটেকসহ বিভিন্ন গবেষণাগারে কয়েক কোটি ডলার অনুদান প্রদান করেছেন। -সংগ্রহক্লড শ্যানন
বিশ্বব্যাপী আজকের যে তথ্যপ্রযুক্তির প্রসার, এর পেছনে রয়েছে অসংখ্য বিজ্ঞানী-গবেষকদের অবদান। বিশেষ করে কম্পিউটার বিজ্ঞানীদের অবদান অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। এসব বিজ্ঞানীদের মধ্যে কেউ কেউ স্বীয় প্রতিভায় উদ্ভাসিত হয়ে নিজের নামটি ইতিহাসের পাতায় লিখিয়েছেন স্বর্ণাক্ষরে। তাদেরই একজন ক্লড শ্যানন। যুক্তরাষ্ট্রের এই গণিতবিদ, তড়িেকৗশল প্রকৌশলী এবং ক্রিপ্টোগ্রাফারকে বলা হয়ে থাকে ‘ইনফরমেশন থিওরি’র জনক। ১৯৪৮ সালে ইনফরমেশন থিওরি’র উপরে তার লেখাটি দিয়েই তিনি সারা বিশ্বে আলোড়ন তৈরি করেন। তবে তার আগেই ১৯৩৭ সালে তিনি ডিজিটাল কম্পিউটার এবং ডিজিটাল সার্কিট নিয়ে গবেষণাপত্র প্রকাশ করে তার প্রতিভার স্বাক্ষর রাখেন। তখন তার বয়স ছিল মাত্র ২১ বছর। ১৯১৬ সালে জন্ম নেয়া শ্যানন তার শিক্ষা জীবনের শুরু থেকেই বিজ্ঞান এবং গণিতে ভালো করতে থাকেন। পাশাপাশি বিভিন্ন যন্ত্রের প্রতি তার প্রবল আগ্রহ লক্ষ করা যায়। তিনি বাড়িতে বসেই নানান ধরনের যন্ত্র তৈরি করতে থাকেন। ১৯৩২ সালে তিনি মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। এখান থেকে তিনি ১৯৩৬ সালে তড়িেকৗশল এবং গণিতে দুইটি স্নাতক ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। পরে তিনি ম্যাসাচুসেটস ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজিতে (এমআইটি) ডিফারেন্সিয়াল অ্যানালাইজার (একটি অ্যানালগ কম্পিউটার) নিয়ে গবেষণা করতে থাকেন। এই গবেষণার সময়েই তিনি রিলে এবং সুইচিং সার্কিট নিয়ে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেন যা তাকে ১৯৩৯ সালে নোবেল পুরস্কার এনে দেয়। তার সেই গবেষণাপত্রকে সেই সময় অন্যান্য বিজ্ঞানীরা ‘শতকের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ তত্ত্ব’ হিসেবে অভিহিত করেন। এরপর তিনি বুলিয়ান অ্যালজেবরা, বাইনারি সংখ্যাতত্ত্ব এবং ডিজিটাল সার্কিট নিয়ে কাজ করতে থাকেন। পরে তিনি বেল ল্যাবরেটরিতে কাজ করেন। এখান থেকেই তিনি ইনফরমেশন থিওরি নিয়ে গবেষণা শুরু করেন এবং ১৯৪৮ সালে তিনি প্রকাশ করেন ‘আ ম্যাথমেটিক্যাল থিওরি অব কমিউনিকেশন’। আজকের ইনফরমেশন থিওরির অনেকটাই এই প্রকাশনার ‘শ্যানন’স ইনফরমেশন থিওরেম’-এর উপর নির্ভরশীল। পরে তিনি চৌম্বকীয় মাউস, কম্পিউটারে দাবা খেলার প্রোগ্রামসহ নানান ধরনের প্রোগ্রাম তৈরি করেছেন। তার কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ তিনি নোবেল পুরস্কারসহ প্রযুক্তি বিশ্বের প্রায় সব কয়টি গুরুত্বপূর্ণ পুরস্কারই পেয়েছেন। -সংগ্রহবার্নে স্ট্রাউসট্রাপ
কম্পিউটারের জন্য নানান ধরনের প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজের মধ্যে বহুল ব্যবহূত একটি সি++। হাই লেভেল এবং লো লেভেল ল্যাংগুয়েজের সমন্বয় বলা যায় একে। বহুল ব্যবহূত এই প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজটির উদ্ভাবক ডেনিশ কম্পিউটার বিজ্ঞানী বার্নে স্ট্রাউসট্রাপ। ১৯৫০ সালের ৩০ ডিসেম্বর ডেনমার্কের আরহস শহরে জন্মগ্রহণ করেন বার্নে। ১৯৭৫ সালে তিনি ইউনিভার্সিটি অব আরহস থেকে গণিত এবং কম্পিউটার বিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৭৯ সালে তিনি কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটার বিজ্ঞানে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। ওই বছরেই তিনি সি++ উদ্ভাবনের কাজ শুরু করেন। সি++ নিয়ে তিনি চারটি বইও লিখেছেন। বর্তমানে তিনি টেক্সাস এ এন্ড এম বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক এবং ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের চেয়ারম্যান হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। -সংগ্রহডেনিস রিচি
আমেরিকান কম্পিউটার বিজ্ঞানী ডেনিস রিচিকে আমরা হারিয়েছি গত বছরের অক্টোবরের ১২ তারিখে। আজকের এই কম্পিউটার নির্ভর বিশ্বে তার অবদান চিরস্মরণীয়। কম্পিউটারের অত্যন্ত মৌলিক পর্যায়ের এবং বিশ্বব্যাপী বহুল ব্যবহূত কম্পিউটার প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ ‘সি’ উদ্ভাবন করেন তিনি। এছাড়া তার সহকর্মী কেন থম্পসনের সাথে তিনি উদ্ভাবন করেন ইউনিক্স অপারেটিং সিস্টেম। তার জীবদশাতেই তিনি তার অবদানের জন্য প্রচুর স্বীকৃতি পেয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছে ১৯৮৩ সালে পাওয়া ‘ট্যুরিং অ্যাওয়ার্ড’, ১৯৯০ সালে আইট্রিপল ই থেকে পাওয়া ‘হ্যামিং মেডেল’, ১৯৯৯ সালে ‘ন্যাশনাল মেডেল অফ টেকনোলজি’ প্রভৃতি। -সংগ্রহজন ম্যাকার্থি
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অন্যতম একজন জনক হিসেবে অভিহিত করা হয় কম্পিউটার বিজ্ঞানী জন ম্যাকার্থিকে। ছোটবেলা থেকেই অত্যন্ত প্রতিভাবান ম্যাকার্থি নির্ধারিত সময়ের দুই বছর পূর্বেই স্নাতক সম্পন্ন করেন। পরে তিনি প্রিন্সটন, স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটি এবং এম আইটিতে খন্ডকালীন সময়ে জন্য অধ্যাপনা করেন। শেষে স্ট্যানফোর্ডে তিনি পূর্ণকালীন শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন ১৯৬২ সালে এবং অবসর নেয়া পর্যন্ত (২০০০ সালে) এখানেই কর্মরত ছিলেন। এখানেই তিনি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বিষয়ে গবেষণা শুরু করেন। ‘আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স’ শব্দগুচ্ছও তিনিই প্রথম ব্যবহার করেন। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় অবদানের জন্য তাকে ‘ট্যুরিং অ্যাওয়ার্ড’ প্রদান করা হয়। পরে তিনি ‘ন্যাশনাল মেডেল অফ সায়েন্স’ সহ আরও অন্যান্য পুরস্কারও লাভ করেন। -সংগ্রহজর্জ স্টিবিজ
আধুনিক ডিজিটাল কম্পিউটার ব্যবস্থার অন্যতম জনক হিসেবে স্বীকৃত জর্জ রবার্ট স্টিবিজ। ১৯০৪ সালের ৩০ এপ্রিল তিনি জন্মগ্রহণ করেন পেনসিলভ্যানিয়ায়। ডেনিসন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও ইউনিয়ন কলেজ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী লাভ করার পর তিনি কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রী লাভ করেন ম্যাথমেটিক্যাল ফিজিক্স বিষয়ে। এরপর তিনি বেল ল্যাবরেটরিতে কাজ শুরু করেন। এখানেই তিনি গবেষণা করতে থাকেন বাইনারি বা দ্বিমিক সংখ্যাতত্ত্ব বিষয়ে। এসময়েই তিনি যথাযথভাবে ‘বুলিয়ান লজিক’ ব্যাখ্যা করতে সমর্থ হন। পরে তিনি সুইচিং উপাদান হিসেবে ইলেকট্রোমেকানিক্যাল রিলেতে বুলিয়ান লজিক ডিজিটাল সার্কিট ব্যবহার করতে সক্ষম হন। -সংগ্রহজন ভন নিউম্যান
হাঙ্গেরিয়ান-আমেরিকান বহুশাস্ত্রবিদ জন ভন নিউম্যান গণিতসহ কম্পিউটার বিজ্ঞানের নানান শাখায় রেখে গেছেন অবিস্মরণীয় অবদান। সেট থিওরি, ফাংশন অ্যানালাইসিস, কোয়ান্টাম মেকানিকস, ফ্লুইড ডায়নামিকস, লিনিয়ার প্রোগ্রামিং, নিউমেরিক্যাল অ্যানালাইসিস এবং এরকম আরও বহু বিষয়ে তিনি রেখে গেছেন তার প্রতিভার স্বাক্ষর। প্রযুক্তি বিশ্বে মানুষ তাকে মনে রেখেছে বিশেষভাবে ‘ভন নিউম্যান আর্কিটেকচার’র জন্য। একটি ইলেকট্রনিক ডিজিটাল কম্পিউটারের জন্য তার এই আর্কিটেকচারকে মনে করা হয় আজকের আধুনিক কম্পিউটারের অন্যতম মৌলিক কাঠামো। ১৯৫৭ সালে মাত্র ৫৪ বছর বয়সে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। -সংগ্রহল্যারি ওয়াল
যুক্তরাষ্ট্রের কম্পিউটার বিজ্ঞানী, প্রোগ্রামার এবং লেখক ল্যারি ওয়াল। তার নানান ধরনের গবেষণা থাকলেও তিনি তার উদ্ভাবিত পার্ল প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজের জন্যই বিশ্বব্যাপী বিখ্যাত হয়ে ওঠেন। ১৯৫৪ সালে জন্ম নেওয়া ল্যারি ওয়াল সিয়াটল প্যাসিফিক ইউনিভার্সিটি থেকে রসায়ন এবং সঙ্গীত বিষয়ে পড়ালেখা শুরু করেন। পরে তিনি চিকিত্সা বিজ্ঞান নিয়েও কিছু পড়ালেখা করেন এবং ছাড়া ছাড়াভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটিং সেন্টারেও কাজ করেন। সবশেষে তিনি ন্যাচারাল এন্ড আর্টিফিসিয়াল ল্যাংগুয়েজের উপর স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। পরবর্তীতে তিনি নাসার একটি প্রকল্পেও কাজ করার জন্য যোগদান করেন। তিনি এবং তার স্ত্রী গ্র্যাজুয়েট স্কুলে থাকা অবস্থাতেই ভাষাতত্ত্ব নিয়ে কাজ করতে থাকেন। তারা তখন একটি কৃত্রিম ভাষাও তৈরি করেন। তবে সেটাকে পূর্ণাঙ্গ রূপ দিতে পারেননি। পরবর্তীতে ১৯৮৭ সালে ইউনিক্স স্ক্রিপ্টিংয়ের কাজের জন্য তৈরি করেন ‘পার্ল’ নামে একটি হাই-লেভেল প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ। এই প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজের কারণেই তিনি বিখ্যাত হয়ে রয়েছেন প্রযুক্তি বিশ্বে। -সংগ্রহঅ্যালান কুপার
তৃতীয় প্রজন্মের প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ ‘ভিজ্যুয়াল বেসিক’ আধুনিক সব প্রোগ্রামিংয়ের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। এই ভিজ্যুয়াল বেসিকের জনক বলা হয় অ্যালান কুপারকে। ১৯৫২ সালের ৩ জুন জন্ম নেওয়া কুপার স্থাপত্যবিদ্যা নিয়ে পড়ালেখা শুরু করেন। পড়ালেখা করার টাকা জোগাড় করতেই তিনি প্রোগ্রামিং শিখে খণ্ডকালীন একটি কাজ শুরু করেন। সত্তরের দশকে কুপার ‘স্ট্রাকচারড সিস্টেম গ্রুপ’ নামে প্রথম একটি সফটওয়্যার কোম্পানি গড়ে তোলেন। পরে তিনি গর্ডন ইউব্যাংকস-এর সাথে ‘সি বেসিক’ নিয়ে কাজ শুরু করেন। মাইক্রোসফটের বিল গেটস এবং পল অ্যালেনের তৈরি ‘মাইক্রোসফট বেসিক’-এর শুরুর দিকের প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলো এই সি বেসিক। পরে তিনি ১৯৮৮ সালে উইন্ডোজের জন্য ভিজ্যুয়াল বেসিক তৈরি করেন। ভিজ্যুয়াল বেসিক ছাড়াও ‘অ্যাবাউট ফেস৩: দ্য অ্যাসেনশিয়াল অফ ইন্টার্যাকশন ডিজাইন’ এবং ‘দ্য ইনমেটস আর রানিং দ্য অ্যাসাইলাম: হোয়াই হাই-টেক প্রোডাক্টস ড্রাইভ আস ক্রেজি অ্যান্ড হাউ রিস্টোর দ্য স্যানিটি’ শীর্ষক দুইটি বইয়ের জন্য তিনি চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন। -সংগ্রহরিচার্ড ব্রডি
ওয়ার্ড প্রসেসিং সফটওয়্যার হিসেবে বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়তম সফটওয়্যারের নাম মাইক্রোসফট ওয়ার্ড। বহুল ব্যবহূত এই সফটওয়্যারটির নির্মাতা রিচার্ড রিভস ব্রডি। ১৯৫৯ সালের ১০ নভেম্বর জন্ম নেওয়া ব্রডি হার্ভার্ড কলেজে ফলিত গণিত বিষয়ে স্নাতক কোর্সে ভর্তি হন ১৯৭৭ সালে। তার সহশিক্ষার বিষয় ছিলো কম্পিউটার বিজ্ঞান। এখান থেকে তিনি চলে যান পালো আল্টো, ক্যালিফোর্নিয়াতে এবং সেখানে জেরক্স কর্পোরেশনের অ্যাডভান্সড সিস্টেম ডিভিশনে কাজ নেন। সেখানে তার পরিচয় হয় চার্লস সিমোনির সাথে এবং তার সাথেই তিনি আল্টো কম্পিউটারের জন্য এক্স ওয়ার্ড প্রসেসর তৈরি করেন। সিমোনি ১৯৮১ সালে মাইক্রোসফটে যোগ দিলে ব্রডিও তার সাথে মাইক্রোসফটের ৭৭তম কর্মী হিসেবে যোগ দেন। এরপর মাত্র সাত মাসের মধ্যে তিনি মাইক্রোসফট ওয়ার্ডের প্রথম সংস্করণটি তৈরি করেন। পাশাপাশি সময়ে তিনি মাইক্রোসফটের জন্য প্রথম সি কমপ্লায়ার, নোটপ্যাডের মূল সংস্করণ এবং আইবিএম পিসি’র জন্য ওয়ার্ড তৈরি করেন। মাইক্রোসফট ছাড়ার পর তিনি দুইটি বেস্টসেলার বই লিখেন এবং পোকার খেলার সাথে জড়িত হন। -সংগ্রহব্রেন্ডন এইখ
আজকের আধুনিক এই যুগে জাভাস্ক্রিপ্ট কোনো নতুন শব্দ নয়। এই স্ক্রিপ্টিং ল্যাংগুয়েজের মাধ্যমে নানান ধরনের প্লাটফর্মে বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশন রান করানো যায়। এই জাভাস্ক্রিপ্টের নির্মাতা হচ্ছেন ব্রেন্ডন এইখ। সান্তা ক্লারা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণিত ও কম্পিউটার বিজ্ঞানে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করা এইখ ১৯৮৬ সালে ইউনিভার্সিটি অফ ইলিনয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর ‘সিলিকন গ্রাফিক্স’ নামের প্রতিষ্ঠানটিতে তিনি অপারেটিং সিস্টেম এবং নেটওয়ার্কিং কোড নিয়ে কাজ শুরু করেন। এরপর এইখ যোগ দেন মাইক্রোইউনিটি সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে। মাইক্রোকার্নেল এবং ডিএসপি কোড নিয়ে কাজ করতে গিয়ে সেখানে তিনি জিএনইউ কম্পাইলার কালেকশনের জন্য প্রথম এমআইপিএস আর৪০০০ পোর্ট তৈরি করেন। পরে তিনি নেটস্কেপ কমিউনিকেশন কর্পোরেশনে যোগদান করেন এবং সেখানেই নেটস্কেপ নেভিগেটর ওয়েব ব্রাউজারের জন্য জাভাস্ক্রিপ্ট তৈরির কাজে হাত দেন। ১৯৯৮ সালে মজিলা ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠাতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন এইখ। পরে নেটস্কেপ ওয়েব ব্রাউজার বন্ধ ঘোষণা করা হলে ২০০৩ সালে তিনি মজিলাতে যোগ দেন। মজিলা ফাউন্ডেশনের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য হিসেবে এবং চিফ টেকনোলস্টি হিসেবে কাজ করার পর ২০০৫ সাল থেকে তিনি মজিলা কর্পোরেশনের চিফ টেকনোলজি অফিসার হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।-সংগ্রহ
মার্ক ইউয়িং
উন্মুক্ত অপারেটিং সিস্টেম হিসেবে বিশ্বব্যাপী ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে রেডহ্যাট লিনাক্সের। লিনাক্সের এই রেডহ্যাট সংস্করণটি বিশ্বব্যাপী ডেভেলপারদের অন্যতম পছন্দের একটি অপারেটিং সিস্টেম। আর এই রেডহ্যাটের জনক বলা যায় মার্ক এউয়িংকে। ১৯৬৯ সালের ৯মে জন্মগ্রহণ করা মার্ক স্নাতক সম্পন্ন করেন ১৯৯২ সালে কার্নেগি মেলন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। তখন থেকেই তিনি সকলের কাছে একজন কম্পিউটার বিশেষজ্ঞ হিসেবে পরিচিত ছিলেন। আর তখন তিনি সবসময় লাল রঙের হ্যাট পরিহিত থাকতেন। কম্পিউটার বিষয়ে যেকেউ তার সাহায্য চাইলে ‘ম্যান ইন দ্য রেড হ্যাট’ বলে তাকে অভিহিত করতেন। এরপর তিনি লিনাক্স অপারেটিং নিয়ে কাজ শুরু করেন। লিনাক্সের এই নতুন সংস্করণের নাম প্রাথমিকভাবে রাখেন তার পরিহিত লাল হ্যাটের অনুসারে রাখেন ‘রেড হ্যাট’। পরবর্তীতে অবশ্য এই রেড হ্যাট নামটিই স্থায়ী হয়ে যায়। নব্বইয়ের মাঝামাঝিতে তিনি ‘৮৬ ওপেন প্রজেক্ট’-এর সাথেও জড়িত হয়ে কাজ করেন ইউয়িং।-সংগ্রহ