Saturday, February 9, 2013

বিষণ্ণতা কাটিয়ে ওঠার ১০টি টিপস!


১/ হাসির কোনো ছায়াছবি দেখুনঃ
আমরা জানি, হাসি হলো মহৌষধের নাম। আপনি যখন মন খারাপ করে বসে থাকবেন, তখন একটি হাসির ছবি দেখুন না! দেখবেন, সারাদিনের যাবতীয় স্ট্রেস দূর হয়ে যাবে, কারণ, হাসলে শরীরে এনডরফিন নিঃসরিত হয়, যা আপনার মুড ভালো করার জন্য অত্যন্ত জরুরি। তাছাড়া হাসলে শরীরের অতিরিক্ত ক্যালরি পোড়ে এবং হৃদপিণ্ডের রক্তসঞ্চালন স্বাস্থ্যকর পর্যায়ে বৃদ্ধি পায়। তবে দেরি কেন? মন খারাপ?একটা হাসুর ছবি নিয়ে বসে পড়ুন না!

২/ স্বাস্থ্যকর এবং সঠিক খাদ্য গ্রহণ করুনঃ

অনেক সময় আমাদের খাদ্যাভ্যাসে সঠিক পরিমাণ পুষ্টির অভাবের কারণে মুড খারাপ থাকতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড এবং ভিটামিন বি সমৃদ্ধ খাদ্যের অভাবে ডিপ্রেশান এবং নেতিবাচক মুডের সৃষ্টি হতে পারে। ফিনল্যান্ডের কুওপিয়ো বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণার ফলাফলে বলা হয়েছে, ভিটামিন বি সাপ্লিমেন্ট ট্যাবলেট ডিপ্রেশান/বিষণ্ণতার চিকিৎসায় অত্যন্ত কার্যকরী।
বিতর্কিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, চকলেট খেলে মন ভাল হয়ে যায়। তবে এ কথা সত্য যে চকলেট এনডরফিন নিঃসরণে সহায়ক।
৩/ ঘর হতে বাহির হতে শিখুনঃ
ভিটামিন ডি এর অভাবের কারণেও অনেক সময় মানুষ বিষণ্ণতায় ভুগতে পারে। ভিটামিন ডি অনেকরকম খাবারে পাওয়া গেলেও, এর সবচেয়ে
পরিচিত এবং প্রধান উৎস হচ্ছে সূর্যালোক। মন খারাপ? ঘরে বসে না থেকে বাইরে থেকে হেঁটে আসুন। গায়ে রোদ লাগান। দেখবেন, ভালো লাগছে।
৪/ ব্যায়াম করুনঃ

মন খারাপ লাগছে? যদি সম্ভব হয়, জিমে যান। নয়তো জগিং করতে বের হন। বাইরে সম্ভব না হলে ছাদে চলে যান। সেটাও সম্ভব না হলে
ঘরে বসে দড়িলাফ করুন। মোদ্দা কথা, শরীরকে ঘামতে দিন। ঘামের সাথে শরীরের বিষাক্ত উপাদানগুলো বাইরে চলে যাবে, এবং আপনার
মস্তিষ্ক হতে এনডরফিন এবং এনান্ডামাইড নিঃসৃত হবে যা আপনার ভিতর সুখী এক অনুভূতি এনে দেবে। প্রতিদিন অন্তত ১৫-৩০ মিনিট
ব্যায়ামের চেষ্টা করুন।
৫/ সুগন্ধী/এরোমাথেরাপি নিনঃ
সুন্দর গন্ধ মন ভালো করার একটি ভাল নিয়ামক। অনেকেই মনে করেন, শুধুমাত্র রিলাক্সেশানের জন্য এরোমাথেরাপি ব্যবহার করা হয়।
আসলে না, বিষণ্ণতা কাটানোর জন্যও এর ব্যবহার যথেচ্ছ। বাজারে খুঁজলে বার্গামোট, জেরানিয়াম, নেরোলি, জেসমিন ইত্যাদি তেল পাওয়া যাবে। এগুলোকে কূপিতে ভরে জ্বালিয়ে ঘরে রাখতে পারেন। অথবা, এইসব সুগন্ধযুক্ত মোমবাতিও বাজারে পাওয়া যায়। ঘরে জ্বেলে রাখতে পারেন।
৬/ ভয়কে জয় করুনঃ
জীবনের হাসিখুশির জন্য এনডরফিনের নিঃসরণ অত্যন্ত জরুরি। এর প্রবৃদ্ধি এবং আপনার আত্মবিশ্বাসের সম্প্রসারণের জন্য এমন একটি
কাজের উদ্যোগ নিন, যা আপনি অনেকদিন ধরে করবেন করবেন বলে ভেবে আসছেন, কিন্তু সাহসের অভাবে করতে পারছেন না। হতে পারে সেটাঃ প্রিয় মানুষটাকে ভালবাসার কথা জানিয়ে দেয়া, জিমে ভর্তি হওয়া, দেশের বাইরে পড়তে যাওয়া।চাকরির জন্য এপ্লাই করা ইত্যাদি। আপনার মধ্যে লুক্কায়িত ভীতিটাকে জয় করুন রোমাঞ্চ দিয়ে। দেখবেন, আপনার অজান্তেই খুশি খুশি লাগবে।
৭/ কথা বলুনঃ
আপনার বিষণ্ণতা যদি যথেষ্ট খারাপ পর্যায়ে চলে যায়, তবে আপনি কারো সাথে কথা বলুন। মনে রাখবেন, মানুষ সামাজিক জীব, এবং কখনোই আমরা একা নই। কাছের বন্ধু/মা-বাবা/ভাই-বোন/প্রেমিক/প্রেমিকা/স্বামী/স্ত্রী অথবা আপনার চিকিৎসকের সাথেই আপনার কষ্ট শেয়ার করুন। সহযোগিতা চাওয়ার মাঝে লজ্জার কিছু নেই। এটা সবসময় আমাদের মনে রাখতে হবে।
৮/ আপনার পছন্দের কাজগুলো নিয়মিত করুনঃ
একেকটি মানুষের একেকরকম কাজ পছন্দ। কেউ বিছানায় আধশোয়া হয়ে কফির মগ হাতে গল্পের বই পড়তে ভালবাসে, কেউ ভালবাসে বন্ধুদের সাথে আড্ডা মারতে, কেউ ভালবাসে মোমবাতি জ্বালিয়ে রাতের বেলা গান শুনতে… ইত্যাদি। নিজের পছন্দের কাজটি প্রতিদিন করার চেষ্টা করুন। নিজের যত্ন নিন।
৯/ মানুষের জন্য কিছু করুনঃ

সবসময় আত্মকেন্দ্রিক হয়ে থাকাটাও কিন্তু সমাজে বসবাসকারী জীবের বৈশিষ্ট্য নয়। আপনার থেকেও কষ্টে হয়তো অনেক মানুষ আছে। তাদের কথা মাথায় আনুন। আফ্রিকাতে বিশুদ্ধ পানির অভাবে শিশুরা মারা যাচ্ছে। ঠাণ্ডায় উত্তর বঙ্গের মানুষ কষ্ট পাচ্ছে, শিক্ষার অভাবে পথশিশুরা ফুল বিক্রি করছে। অথচ, সকল রকম সুবিধা পেয়েও আপনি কেন ওদের থেকে নিজেকে বেশি অসুখী ভাববেন? ওদের কথা ভাবুন। ওদের জন্য স্বার্থহীনভাবে কিছু করার চেষ্টা করুন। কিছু করতে পারলে দেখবেন, আপনার ভালো লাগছে।
১০/ জীবনের লক্ষ্যপূরণের চেষ্টা করুনঃ
সবার জীবনেই কিছু লক্ষ্য থাকে। হতে পারে সেটা শরীর ফিট করা, একটা ড্রীমজবে জয়েন করা, কোরমা-পোলাও রান্না শেখা ইত্যাদি। সম্ভব হোক বা না হোক, সেই লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য যাত্রা শুরু করার চেষ্টা করুন। মনোযোগ এমন একদিকে নিয়ে যান, যাতে আপনার বিষণ্ণতার দিকে মনোযোগ দেবার কথা আপনার মাথাতেই আর না থাকে। চেষ্টা করতে থাকুন, দেখবেন, জীবন অনেক সুন্দর, আরও অনেকদিন বেঁচে থাকতে ইচ্ছে করবে তখন। ভবিষ্যতের চিন্তাই হবে তখন আপনার চিন্তাজগতের ফসল